
স্বপ্নের উড়ান - জীবনের সুন্দর অধ্যায়
আমার স্বপ্ন ছিলো বিয়ের পর স্বামীর সাথে উমরাহ করবো।
ইন্টারের পর থেকে একটু একটু করে টাকা জমাতাম। ঈদের কাপড় কেনার বাজেট থেকে প্রথমে একাংশ রেখে দিতাম আমার উমরাহ প্রজেক্টে। তারপর বাকিটুকু দিয়ে শপিং। ছোটো চাচ্চু যখন অনেকদিন পর দেশে এসেছিলেন, যাবার আগে আমাকে ১০০ ডলারের একটি নোট দিয়ে যান। সেটাও জমিয়ে রাখি উমরাহর জন্য। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর আব্বু প্রতি সপ্তাহের হাত খরচ একসাথে দিতেন। আমি সেখান থেকেও টাকা জমাতাম।
আমি বিয়ের প্রস্তাবের ক্ষেত্রে সবসময় নিজেকে ফ্লেক্সিবল রাখতাম। আমার বড় বোন বলতো- “পড়ালেখা শেষ না করে বিয়ে করবো না।” পড়ালেখা শেষে তার যখন বিয়ে হয়, তখন তার বয়স ২৮ বছর! শেষদিকে রুমা আপু কী পরিমাণ হতাশায় ভুগছিলো, আমি তার সাক্ষী। আপু লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতো!
আপুর বিয়ের পর আমি আম্মুকে জানিয়ে দিই, “আমার জন্য ভালো প্রস্তাব আসলে কিন্তু আমাকে বিয়ে দিবা।” আমার কথা শুনে আম্মু হাসতো! ভার্সিটিতে উঠে পড়ালেখা করতে গিয়ে আমি বেশ হতাশ হই। কী আশা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ইসলামিক হিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছি, অনেককিছু জানবো। ছাতার মাথা! আমাদেরকে পড়ানো হতো ওরিয়েন্টালিস্টদের বই।
আমি তখন ডিপার্টমেন্টের বাইরে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়া শুরু করি। বই কিনতাম, অনলাইন কোর্স কিনতাম। তখন আমার উমরাহ প্রজেক্টে টাকা জমানোতে ভাটা পড়ে! মাঝেমধ্যে গিফট পেতাম। তখন পুষিয়ে নিতাম। একবার ঈদে রুমা আপু আমাকে ৫০০০ টাকা সালামি দেয়। সেই টাকার অর্ধেক রেখেছিলাম উমরাহর জন্য, বাকি অর্ধেক দিয়ে কিনেছিলাম মুসলিম নারীদের জীবনী নিয়ে ৬ টি বই।
সেকেন্ড ইয়ারে আমার একটি বিয়ের প্রস্তাব আসে। আম্মু জিজ্ঞেস করলো, “তমা, কী করবো?”
আমি পাত্রের খোঁজ নিলাম। পাত্র তাবলিগ জামাতের সাথে যুক্ত, দ্বীনদার; পেশায় একজন ডাক্তার।
পাত্রের বায়োডাটা দেখে সবকিছু পছন্দ হয়, কিন্তু ডাক্তার শুনে আমার মন সায় দিচ্ছিলো না!
আমার ছোটো চাচ্চু ডাক্তার। তাকে দেখতাম এতো ব্যস্ত, বাসায় সময় দিতে পারতেন না ঠিকমতো। হাসপাতাল, চেম্বার, পড়াশোনা এসব নিয়েই পড়ে থাকেন। এখন আবার উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে।